নিশিরাতের অধ্যাদেশ’ বাতিলের দাবীতে কাস্টমস ও আয়কর ক্যাডারদের কলম বিরতীর ১ম দিন

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ
মোঃএমদাদুল হক মিলন

সংস্কারে ‘নিশিরাতের অধ্যাদেশ’ বাতিল চেয়ে কাস্টমস ও আয়কর ক্যাডারদের ৩ দিনের কলম বিরতির আজ ১ম দিন। ৩ দিনের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- আজ ১৪ই মে-২৫ বুধবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা, আগামী ১৫ই মে-২৫ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টা ও ১৭ই মে-২৫ শনিবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কলম বিরতি পালন করবে। তবে কাস্টম হাউস ও শুল্ক স্টেশন দিয়ে আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা, আমদানি-রপ্তানি ও বাজেট-এই তিনটি কার্যক্রম চালু থাকবে। বাকি সব কার্যক্রম কলম বিরতির আওতায় বন্ধ থাকবে। আগামী ১৭ মে বিকেল তিনটায় পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

১৩ মে-২৫ মঙ্গলবার আগারগাঁও এনবিআরের সামনে কাস্টমস ও ট্যাক্স বিভাগ ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সকল স্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দের সমন্বয়ে গঠিত “এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের” ব্যানারে অবস্থান কর্মসূচি থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এই কলম বিরতির ঘোষণা দেন। দাবি আদায় না হলে ১৭ মে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলেও অবস্থান কর্মসূচিতে স্পষ্ট জানানো হয়েছে।

“এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ” ব্যানারে কলম বিরতির কারণ হিসেবে বলেন, এনবিআর সংস্কার বিষয়ক পরামর্শক কমিটির জমা দেয়া প্রতিবেদন কখনোই জনসম্মুখে প্রকাশ করা হয়নি। তাহলে কার স্বার্থরক্ষায় এত গোপনীয়তা? সংস্কার কমিটি গণমাধ্যমে বলছে- তাঁদের সুপারিশ মোতাবেক অধ্যাদেশ করা হয়নি। তাহলে সংস্কারের নামে গোপনে কার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে এই অধ্যাদেশ জারি করা হলো! ৫৩ বছর ধরে সরকারের রাজস্বের প্রধান যোগানদাতা সংস্থা এনবিআর বিলুপ্ত করে দেয়া হচ্ছে, অথচ এর প্রধান অংশীজন সুশীল‌ সমাজ, ব্যবসায়ী, চেম্বার, অর্থনীতিবিদ, জনগণ কারো সাথে আলোচনা না করেই অধ্যাদেশ জারি করা হলো। গোপনে অধ্যাদেশ জারির‌ লক্ষ্যে ছুটির‌দিনে মিটিং করে, অন্ধকারে ভেটিং করে, মধ্যরাতে গেজেট প্রকাশ করা হলো। যদি সর্ষের মধ্যে ভূত নাই থাকবে, থাকলে এত নাটকীয়তা করে গেজেট প্রকাশ করা হবে কেনো?
“এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ” দাবি আদায়ে কলম বিরতির কারণ হিসেবে উত্থাপিত দাবিতে আরও বলেন, উন্নয়নমুখী সরকারের আড়ালে ঘাপটি মেরে থাকা ফ্যাসিস্টের দোসর আমলা চক্রের ষড়যন্ত্রের কারণে এনবিআর দখলদারিত্বর শেষ কোথায়? জাতীয় বাজেট প্রস্তুতির সময়ে রাজস্ব আদায়ে ধ্বস নামিয়ে অর্থনীতিতে অস্হিরতা সৃষ্টির অপচেষ্টা কার প্ররোচনায় করা হচ্ছে। আইএমএফ-সহ দাতা সংস্থাগুলোর সুপারিশ ছিল রাজস্ব নীতি পৃথক করা। কিন্তু তাঁরা রাজস্ব কাঠামো বিক্ষিপ্ত করে আমলাদের হাতে তুলে দিতে বলেন নাই। এতে করে যে রাজস্ব আদায় গতিশীল হবে, বাণিজ্যবান্ধব হবে- এমন ভাবনার-ই বা যুক্তি কি আছে!

এডিসি সাধন কুমার কুণ্ডু বলেন, আমরা এই মুহূর্তে সেভাবে পয়েন্ট আউট করছি না। আমরা চাচ্ছি, সরকার যে সংস্কার কমিটি গঠন করেছে, সেই কমিটির প্রতিবেদন জনসম্মুখে আনা হোক। সেখানে বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের মতামত নেওয়া হোক। সঙ্গে আমাদেরও মতামত নেওয়া হোক। তার ভিত্তিতে যেটি দেশ ও রাজস্বের জন্য ভালো হবে, সেটাতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।

সংগঠনের পক্ষ থেকে তিনি আরও বলেন, কাস্টমস এবং ট্যাক্স-এই দুইটি ক্যাডার, সকল ক্যাডারগণ সরকারের টেকনিক্যাল জায়গা থেকে কাজ করে। ট্যাক্স এবং কাস্টম্‌সের সব পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের লোকজন আমাদের সঙ্গে সমবেত হয়েছে। সারাদেশে আমাদের কর, কাস্টমস ও ভ্যাটের অফিসের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী আমাদের সঙ্গে সংহতি জানিয়েছে। সবার প্রতিনিধিত্ব করে আমরা জমায়েত হয়েছি। এটা আমাদের কারো ব্যক্তিগত বা কোনো ক্যাডার সার্ভিসের বিষয় নয়। আমরা বিশেষায়িত ক্যাডার হিসেবে এই দুইটি সংস্থার সব সার্ভিসের লোকজন কাজ করি। জাতীয় রাজস্ব আহরণের জন্য আমাদের বিশেষায়িত প্ল্যাটফর্ম। এই প্ল্যাটফর্মটি আজ থেকে অধ্যাদেশের মাধ্যমে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারের সংস্কার কার্যক্রমের সঙ্গে এই দুই ক্যাডার সার্ভিসের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী সবসময় একমত ছিলো। এবং এই সংস্কার কার্যক্রমকে সাধুবাদ জানিয়ে সবাই সহযোগিতার হাত ধরে, আমরা আশা করেছিলাম, সবার মতামতের প্রতিফলনে জাতীয় কনসেসারের মধ্য দিয়ে একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। যার পরিপ্রেক্ষিতে আজ যে অধ্যাদেশ জারি হয়েছে, তা দেখবো। কিন্তু এই অধ্যাদেশ জারি হওয়ার প্রক্রিয়ায় গত তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে ৩ থেকে ৪শ কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রতিনিয়ত জমায়েত হয়েছে যে অধ্যাদেশটি হচ্ছে, সেখানে তাদের কথা বলার জন্য। কিন্তু একটা পর্যায়ে জানতে পারা গেছে যে, সেখানে সর্বময় সার্ভিসের কারো-ই মতামতের প্রতিফলন ঘটেনি। যেটি নিয়ে দেশের বৃহত্তর অর্থনৈতিক কাঠামো, যেটি কিনা রাষ্ট্রের ভিত্তি। এবং সেই ভিত্তিটি যেন জনবান্ধব এবং সংস্কারের পজিটিভ ভিউকে মাথায় রেখে হয় তার জন্য আমরা সবাই একত্রিত হয়েছিলাম। সর্বশেষ গতকাল অধ্যাদেশ জারি হয়েছে। যে ফরমেটে অধ্যাদেশটি জারি হয়েছে সেখানে কাস্টমস এবং ট্যাক্সের সার্ভিসের কারো চাওয়া বা ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেনি।

অধ্যাদেশের খসড়া পর্যায় থেকেই কাস্টমস ও আয়কর ক্যাডারের কর্মকর্তারা প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু সরকার তাদের মতামত উপেক্ষা করেই প্রায় অপরিবর্তিত খসড়ার ভিত্তিতে চূড়ান্ত অধ্যাদেশ জারি করেছে। সংগঠনের পক্ষ থেকে উক্ত আধ্যাদেশ রদ করে পরামর্শক কমিটির সুপারিশ ও স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা পূর্বক অর্থনীতিবিদ ও সুশীল সমাজের অংশগ্রহণে এনবিআর সংস্কার আনার দাবী জানান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিকট।

পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *