ফেসবুক প্রোফাইল ভেরিফাই করবেন যেভাবে

সংগৃহীত
ক্যাপশন: ব্যবহারকারীর পার্সোনাল ব্র্যান্ড তৈরিতে ভেরিফায়েড ব্যাজ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। ছবি: রয়টার্স
আজকের দিনে একে-অন্যের সাথে যোগাযোগ বজায় রাখার গুরুত্বপূর্ণ এক মাধ্যম হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্মটি হচ্ছে ফেসবুক। বিশ্বব্যাপী ৩০০ কোটিরও বেশি মানুষ প্রতিমাসে সক্রিয় থাকেন মেটার মালিকানাধীন এই প্ল্যাটফর্মটিতে। প্রতিদিন সক্রিয় থাকেনে এমন ব্যবহারকারীর সংখ্যাটাও ২০০ কোটির বেশি। আমাদের দেশেও ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৬ কোটির বেশি।
ফেসবুক যে আজ শুধু ব্যক্তিগত যোগাযোগের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে এমন নয়। বরং ব্যবসা ও শিক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রেও ফেসবুকের ব্যবহার প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই যেমন করোনা মহামারীর সময় ফেসবুক পেজ-ভিত্তিক অনেক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে বাংলাদেশ, যেটা দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখার পাশাপাশি কর্মসংস্থান তৈরিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
ফেসবুক-ভিত্তিক ব্যবসা এতটাই জনপ্রিয় হয়েছে যে, ই-কমার্সের আদলে ‘এফ-কমার্স’ (ফেসবুক কমার্স) নামটিও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠে। একই ভাবে শিক্ষা ক্ষেত্রেও ফেসবুকের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় ই-লার্নিংয়ের অনুসরণে ‘এফ-লার্নিং’ (ফেসবুক লার্নিং) নামটি আলোচনায় এসেছে।
ফেসবুকের ২০–এ কী পেল বিশ্বফেসবুকের ২০–এ কী পেল বিশ্ব
ফেসবুকের নানাবিধ ব্যবহার বৃদ্ধির সাথে সাথে আমাদের আর্থ-সামাজিক জীবনে ফেসবুকের তাৎপর্যও বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে নিজেদের প্রোফাইলের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার বিষয়টি বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে ব্যবহারকারীদের জন্য। এজন্য ফেসবুকও নিয়ে এসেছে টু-ফ্যাক্টর-অথেনটিকেশনের মতো নিরাপত্তা ফিচার।
পাশাপাশি ব্যবহারকারীদের জন্য আরেকটি চ্যালেঞ্জিং বিষয় হচ্ছে ফেসবুকে নিজের পরিচয়কে ফেক বা ভুয়া প্রোফাইলের হাত থেকে রক্ষা করা। এক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর একটি উপায় হচ্ছে ফেসবুক প্রোফাইলকে ভেরিফাই করে নেওয়া।
ফেসবুকে ভিডিও অটোপ্লে চালু ও বন্ধ করবেন যেভাবেফেসবুকে ভিডিও অটোপ্লে চালু ও বন্ধ করবেন যেভাবে
ফেসবুক ভেরিফিকেশন কী?
ফেসবুকে কোনো প্রোফাইল ভেরিফায়েড হওয়ার অর্থ হচ্ছে উক্ত প্রোফাইলটি ফেসবুক নিজেই আসল (অথেনটিক) হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। অর্থাৎ নির্দিষ্ট ব্যক্তির আসল প্রোফাইল এটি। ভেরিফায়েড হতে হলে নির্দিষ্ট একটি প্রক্রিয়ায় আবেদন করতে হয়। ব্যবহারকারীর আবেদনের প্রেক্ষিতে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন তথ্য যাচাই-বাছাই করে তাঁদের সিদ্ধান্ত জানায়। উল্লেখ্য, ফেসবুকে কোনো প্রোফাইল ভেরিফায়েড হলে তার পাশে ব্লুটিক ব্যাজ দেখতে পাওয়া যায়।

ফেসবুকে ‘টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন’ চালু করবেন যেভাবেফেসবুকে ‘টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন’ চালু করবেন যেভাবে
ফেসবুক প্রোফাইল ভেরিফায়েড হলে কী সুবিধা?
প্রোফাইল ভেরিফায়েড হওয়ার বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ফেসবুকে নিজের পরিচয় সুরক্ষিত রাখতে পারা। অর্থাৎ যে কেউ চাইলেই আপনার নাম দিয়ে ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খুলে আপনার ‘আইডেনটিটি’ নিজের বলে দাবী করতে পারবে না। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, কখনও আপনার প্রোফাইল হ্যাকড্‌ হলে অ্যাকাউন্ট ফিরিয়ে আনার কাজটিও অনেক সহজ হয়ে যায় যদি অ্যাকাউন্টটি ভেরিফায়েড হয়ে থাকে। কেননা এক্ষেত্রে আপনি সহজেই ফেসবুকের কাছে নিজের পরিচয় প্রমাণ করতে পারবেন, কারণ ফেসবুকের কাছে আপনার পরিচয় প্রদানকারী কোনো ডকুমেন্ট (আইডেনটিটি প্রুফ) আগে থেকেই আছে।
সার্বিকভাবে ফেসবুকে কোনো প্রোফাইল যদি ভেরিফায়েড হয় তাহলে সেই প্রোফাইলটি অন্য ব্যবহারকারীদের কাছে অনেক বেশি বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠে। পাশাপাশি প্রোফাইলের মালিকের বিশ্বাসযোগ্যতাও বেড়ে যায় অন্যান্যদের কাছে। বিশেষ করে যারা নিজেদের পার্সোনাল ব্র্যান্ড তৈরি করতে ইচ্ছুক তাদের ফেসবুক প্রোফাইল ভেরিফায়েড হলে ‘ব্র্যান্ড’ তৈরির কাজটি সহজ হয়ে যায়।
হোয়াটসঅ্যাপে ‘কাস্টম কনটাক্ট লিস্ট’ তৈরি করবেন যেভাবেহোয়াটসঅ্যাপে ‘কাস্টম কনটাক্ট লিস্ট’ তৈরি করবেন যেভাবে
ফেসবুকে প্রোফাইল ভেরিফাই করবেন যেভাবে
পার্সোনাল প্রোফাইল ভেরিফাই করার জন্য নির্দিষ্ট ফর্ম পূরণ করার মাধ্যমে আবেদন করতে হয়। সেজন্য প্রথমে লগইন করার পর ফেসবুকের হেল্প সেন্টারে ‘ভেরিফাই ইওর পেজ অর প্রোফাইল’ সেকশনে বা পেজে যেতে হবে। এবার স্ক্রিনে যে ফর্মটি দেখা যাবে সেটা পূরণ করতে হবে। ‘ভেরিফাই ইওর পেজ অর প্রোফাইল’ পেজটিতে যাওয়ার জন্য এখানে ক্লিক করুন।
ফর্ম পূরণের ক্ষেত্রে প্রথমেই আপনি পেজ না প্রোফাইল ভেরিফাই করতে চাচ্ছেন সেটা সিলেক্ট করে দিতে হবে। এরপর নির্দিষ্ট বক্সে আপনার ফেসবুক প্রোফাইলের লিঙ্কটি দিতে হবে।
হোয়াটসঅ্যাপ ভিডিও কলে এল ২টি নতুন ফিচারহোয়াটসঅ্যাপ ভিডিও কলে এল ২টি নতুন ফিচার
প্রথম ধাপ
প্রথম ধাপে আইডেনটিটি প্রুফ বা পরিচয়ের প্রমাণ দিতে হবে। এক্ষেত্রে অপশন রয়েছে ৫টি: ড্রাইভারের লাইসেন্স, পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র, ট্যাক্স ফাইলিং, সাম্প্রতিক ইউটিলিটি বিলের কপি ও আর্টিকেল অব ইনকরপোরেশন (আইনী ডকুমেন্ট)।
তবে এই ডকুমেন্টগুলোর মধ্যে কোনগুলো ফেসবুক গ্রহণ করবে সেটা নির্ভর করছে কারা এগুলো ইস্যু করেছে তার উপর। এছাড়া পরিচয়ের প্রমাণ হিসেবে আপনি যে ডকুমেন্টই জমা দিবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন না কেন অবশ্যই সেটার ডিজিটাল ভার্সন অর্থাৎ স্ক্যান কপি আপনাকে আপলোড করতে হবে।

যেভাবে হোয়াটসঅ্যাপে সংরক্ষণ করবেন ব্যক্তিগত তথ্যযেভাবে হোয়াটসঅ্যাপে সংরক্ষণ করবেন ব্যক্তিগত তথ্য
দ্বিতীয় ধাপ
আপনার প্রোফাইল বা পেজ ভেরিফিকেশনের দ্বিতীয় ধাপে আপনাকে জানাতে হবে আপনার অ্যাকাউন্টটি কোন ক্যাটাগরিতে ব্লুটিক পাওয়ার যোগ্য। ফেসবুক নিশ্চিত হতে চায় যে আপনার প্রোফাইল বা অ্যাকাউন্টটি জনগুরুত্বপূর্ণ। অর্থাৎ, আপনার প্রোফাইলটি ভেরিফায়েড হলে সাধারণ ব্যবহারকারীরা উপকৃত হবেন।
এই ধাপের ক্যাটাগরি সেকশনে ড্রপ ডাউন মেন্যু থেকে আপনাকে নির্দিষ্ট ক্যাটাগরি সিলেক্ট করে দিতে হবে। এরপর যে দেশ বা অঞ্চলে আপনার প্রোফাইলটি জনপ্রিয় সেটা উল্লেখ করে দিতে হবে।

এর ঠিক নিচে দুটি অপশনাল বক্স রয়েছে। প্রথমটিতে আপনার পেজ বা প্রোফাইল ফলো করেন এমন ব্যক্তিবর্গের নাম, কারণ উল্লেখ করে দিতে পারেন। দ্বিতীয় বক্সটিতে আপনার পেজ বা প্রোফাইল যদি অন্য কোনো নামে পরিচিত হয়ে থাকে সেটাও উল্লেখ করার সুযোগ রয়েছে।
এরপর আপনার প্রোফাইলের গুরুত্ব ও জনপ্রিয়তা প্রমাণ করে এমন ৫টি আর্টিকেল বা সোশ্যাল মিডিয়া লিঙ্ক সাবমিট করার জন্য ৫টি বক্স রয়েছে। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, লিঙ্কগুলোর কোনোটাই পেইড বা প্রোমোশনাল হওয়া চলবে না।

হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ অদৃশ্য বা ডিজঅ্যাপিয়ার করবেন যেভাবেহোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ অদৃশ্য বা ডিজঅ্যাপিয়ার করবেন যেভাবে
তৃতীয় ধাপ
আবেদন প্রক্রিয়ার শেষ ধাপ এটি। উপরে যে তথ্যগুলো আপনি দিয়েছেন সেগুলো সঠিক কিনা তা পুনরায় একবার দেখে নিয়ে ফর্মের নিচে সেন্ড বাটনটিতে ক্লিক করে দিতে হবে। আপনার পেজ বা প্রোফাইল ভেরিফাই করার অনুরোধ পাওয়ার পর ফেসবুক সেটি যাচাই-বাছাই করবে এবং তাঁদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিবে। পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে ৪৮ ঘন্টা থেকে ৪৫ দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
উল্লেখ্য, একবার কোনো প্রোফাইল ভেরিফায়েড হওয়ার মানে এই নয় যে সেটি স্থায়ীভাবে ভেরিফায়েড থাকবে। কেননা ব্যবহারকারী যদি ফেসবুকের কমিউনিটি নীতিমালার ব্যত্যয় ঘটে এমন কোনো কাজ করে সেক্ষেত্রে ভেরিফায়েড স্ট্যাটাস বা ব্যাজ কেড়েও নিতে পারে ফেসবুক।

হোয়াটসঅ্যাপ যেভাবে অর্থ উপার্জন করেহোয়াটসঅ্যাপ যেভাবে অর্থ উপার্জন করে
পরিশেষে…
উল্লেখ্য, সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাকাউন্ট ভেরিফিকেশনের প্র্যাকটিস প্রথম শুরু করে এক্স (তৎকালীন টুইটার) ২০০৯ সালে। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে ভেরিফিকেশন ফিচারটি নিয়ে আসে ফেসবুক।

ফেসবুকে ভেরিফিকেশনের বিষয়টি এখনও পর্যন্ত ঐচ্ছিক হলেও কিছু কিছু অ্যাকাউন্ট অবশ্যই ভেরিফায়েড হতে হবে। যেমন বিশাল অংকের সদস্য আছে এমন গ্রুপগুলোর ভেরিফায়েড হওয়া ২০১৮ সাল থেকেই বাধ্যতামূলক করেছে ফেসবুক। এমনকি ব্যক্তিগত প্রোফাইলে ফলোয়ার সংখ্যা একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ে পৌঁছলে সেক্ষেত্রেও ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ফেসবুক তাঁদের ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া অনেক সহজ করে এনেছে। উল্লেখ্য, ভেরিফিকেশন ব্যাজ ফেসবুকের অন্যান্য ব্যাজ যেমন টপ ফ্যান ব্যাজ বা টপ সেলার ব্যাজ থেকে আলাদা।

যেমনটা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, অনলাইনে পার্সোনাল ব্র্যান্ডের বিশ্বস্ততা তৈরির ক্ষেত্রে অ্যাকাউন্ট ভেরিফিকেশন বেশ কার্যকর একটি উপায়। পার্সোনাল প্রোফাইলের পাশাপাশি বিজনেস পেজেরও ভেরিফায়েড হওয়ার সুযোগ রয়েছে ফেসবুকে।

কোনো প্রোফাইল বা পেজ ভেরিফায়েড হওয়ার অর্থই হচ্ছে সাধারণ ব্যবহারকারী ও গ্রাহকদের কাছে অনেক বেশি বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠা। পাশাপাশি ফেসবুকে কোনো পেজ ভেরিফায়েড হলে সার্চ রেজাল্টে সে পেজের ভালো অবস্থানে থাকার সম্ভাবনা বেড়ে যায় অনেক গুণ। ফলে নতুন গ্রাহক খুঁজে পেতেও বেশ সহায়ক ভূমিকা পালন করে ফেসবুক ভেরিফিকেশন

পোস্টটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *