মোঃএমদাদুল হক মিলন
এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারীর প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে,আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে পটুয়াখালী-৩ (দশমিনা- গলাচিপা) আসনটি আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাটি হিসেবে পরিচিত থাকলেও তা পরিবর্তনে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চান দশমিনা-গলাচিপার আপম জনসাধারণ।এই আসনের সর্বস্তরের মানুষের সাথে আলাপ-আলোচনায় জানতে পেরেছি তারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সাবেক ছাত্রনেতা বিএনপি কার্যনির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য, হাসান মামুনের নেতৃত্বে নতুন এক ইতিহাস গড়ার মধ্য দিয়ে পরিবর্তনের এক বৃহৎ দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন তা সবার মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছে।ঢাকা কলেজ পরবর্তী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাথে যুক্ত হয়ে তার রাজনৈতিক শিষ্টাচার ও সাংগঠনিক দক্ষতার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক, পরবর্তীতে সভাপতি নির্বাচিত হন।২০১০ সালের ছাত্রদল থেকে বিদায় নেওয়ার পর থেকেই নিজ এলাকা দশমিনা-গলাচিপার জনসাধারণের সাথে নিজেকে জরিয়ে নেন। তিনি তার দায়িত্ববোধ, সততা, আদর্শ ও ন্যায়পরায়ণতার ভিত্তিতে সবার কাছে হয়ে উঠেন এক আদর্শিক নেতা।ছাত্র রাজনীতিতে থাকা অবস্থায়ও তিনি দশমিনা-গলাচিপার অসংখ্য বেকার যুবককে চাকরির ব্যবস্থা করে দেন।বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার পতন আন্দোলনে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন।২০১৮ সালে যখন বেগম খালেদা জিয়াকে ফ্যাসিস্ট হাসিনার আদালত একটি মিথ্যা মামলায় জেলে পাঠায় তখন হাসান মামুন তাৎক্ষণিকভাবে তার নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন এতে ফ্যাসিস্ট হাসিনা তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে পরের দিনই একটি মিথ্যা মামলায় তাকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠান,এর আগেও তাকে একাধিক মামলার আসামি, জেল জুলুম, ও নির্যাতনের স্বীকার হতে হয়েছে বহুবার।ছাত্রজীবনে ও তিনি ২০০৭ সালের ৭ মার্চ তারেক রহমান গ্রেপ্তার হলে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি হিসেবে এবং সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজের নেতৃত্বে প্রথম প্রতিবাদ মিছিল বের করেন। এমনকি তারেক রহমানের ১০ বছরের সাজা প্রদান করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রতিবাদে ৯৬ ঘন্টা হরতাল দেওয়ার দাবি করেন হাসান মামুন।স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে দশমিনা, গলাচিপা(পটুয়াখালী-৩) আসনে পূর্ণ সময়ের জন্য বিএনপি মনোনীত কোনো প্রার্থী সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারেননি।১৯৭৮ সালের ১১ অক্টোবর থেকে ১৫ এপ্রিল ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত জিয়াউর রহমানের মন্ত্রিসভায় আব্দুল বাতেন তালুকদার স্বল্প সময়ের জন্য শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন,১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ আসনে তখন ভোটার ছিল ২ লক্ষ ৪০ হাজার ৯৪৫ জন, ভোট প্রদান করেন। ৯৪ হাজার ৯ শত ৮৩ জন। নির্বাচনে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের আ,খ ম জাহাঙ্গীর হোসেন, নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৫১ হাজার ৫১ হাজার ৭ শত ৫৪ ভোট।তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির আব্দুল বাতেন তালুকদার ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১৯ হাজার ২শত ৪৩ ভোট।১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়,তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগ সহ ছোট ছোট আরো কয়েকটি দল সে নির্বাচন বর্জন করে, তাদের দাবির প্রতি সম্মান দেখিয়ে মাত্র ১১ দিনের মাথায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাস করে সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়,এই সংসদের মেয়াদ ছিল ১১ দিন অর্থাৎ শাজাহান খান ১১ দিন মেয়াদের সংসদ সদস্য নির্বাচিত ছিলেন।১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৫৬ হাজার ৭৯ জন, মোট ভোট প্রদান করেন ৯৬ হাজার ১ শত ১৩ জন, নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আ,খ,ম জাহাঙ্গীর হোসেন বিজয় হোন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৫০ হাজার ৬শত ৩৯ ভোট,তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী শাজাহান খান ধানের শীষ প্রতীকে পান ৩১ হাজার ২ শত ৮১ ভোট।২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়,নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৪৩ হাজার ৩ শত ৫১ জন,মোট ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৪৯ হাজার ৪ শত ৪৭ জন,নির্বাচনে আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসেন বিজয়ী হোন,তিনি নৌকা প্রতীকে পান ৭৫ হাজার ১ শত ৩৮ ভোট।তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির শাজাহান খান ধানের শীষ প্রতীকে পান ৬২ হাজার ৩ শত ১০ ভোট।২০০৬ সাল থেকে ২০০৮ পর্যন্ত সেনা সমর্থিত ফখরুদ্দিন-মইনুদ্দিন দেশের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়,নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৩০ হাজার ৭শত ৭৯ জন, এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের গোলাম মাওলা রনি নির্বাচিত হোন,তিনি নৌকা প্রতীকে পান ১ লাখ ২০ হাজার ১০ ভোট,তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আলহাজ্ব শাহজাহান খান ধানের শীষ প্রতীকে পান ৬১ হাজার ৪ শত ২৩ ভোট,২০১৪ সালের ৫ জনুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, বাংলাদেশের ইতিহাসে একতরফা নির্বাচনের যেসব নজির রয়েছে তার জন্য দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অন্যতম।এই নির্বাচনে প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি এবং তাদের রাজনৈতিক মিত্র জামায়েত ইসলামীসহ মোট –রাজনৈতিক দল নির্বাচন বয়কটের প্রেক্ষাপটে অর্ধেকের বেশি আসনে ভোট গ্রহণের প্রয়োজন হয়নি, জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৪জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন।নির্বাচনের দিন ভোটগ্রহণ করা হয়েছিল ১৪৬ টি আসনে,২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর উচ্চ আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করা হয়,আদালত কর্তৃক তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে অসংবাদিক হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।এইভাবে তারা দলীয় সরকারের অধীনে একতরফা ভাবে ২০১৪, ২০১৮, ২০২৪ সালের তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করে।এই তিনটি নির্বাচন নিয়ে দেশে-বিদেশে ব্যাপক আলোচনা, সমালোচনার জন্ম দেয়।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট (সোমবার) ছাত্র-জনতার সর্বোচ্চ আত্মত্যাগ ও তীব্র প্রতিরোধের মুখে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। এর মাধ্যমে প্রায় ১৬ বছরের স্বৈরশাসনের অবসান ঘটে এবং বাংলাদেশ স্বৈরশাসনের কবল থেকে মুক্তি পায়।
শেখ হাসিনার অনুগত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠন যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সশস্ত্র ক্যাডারদের হামলায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শত শত মানুষ নিহত এবং অসংখ্য মানুষ আহত হন।
৫ আগস্ট বাংলাদেশের জনগণের জন্য একদিকে যেমন বিজয়ের দিন, তেমনি এটি একটি মর্মান্তিক দিন হিসেবেও পরিগণিত। কারণ এদিন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও পুলিশের বর্বর হামলায় অনেক মানুষ প্রাণ হারান।
গণআন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। শেখ হাসিনা তার দীর্ঘ শাসনামলে অহংকার করে বলে এসেছিলেন, ‘শেখ হাসিনা পালায় না’।
২০২৪ সালের ২২ জুলাই তিনি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক বৈঠকেও এ কথা বলেছিলেন। কিন্তু সেই বক্তব্য দেওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে জনগণের প্রচণ্ড ঘৃণা ও চাপের মুখে তাকে পদত্যাগ করে পালিয়ে যেতে হয়।
২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সৃষ্ট অসহযোগ আন্দোলনের ফলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর গঠিত হওয়া বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট এই অস্থায়ী সরকার গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারী সমন্বয়কদের প্রতিনিধি দল, বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি এবং সেনাবাহিনীর প্রধান।৮ আগস্ট শপথ গ্রহণের মাধ্যমে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে সরকার গঠন করা হয়।রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন ৬ আগস্ট সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন বলে ঘোষণা দেন।বর্তমান অন্তবর্তী কালীন সরকার ঘোষণা করেন ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারীর প্রথমার্ধে এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে,দীর্ঘদিন পরে মানুষ গণতান্ত্রিক পন্থায় ভোট প্রদান করার আশায় অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।সেই প্রেক্ষিতে দশমিনা গলাচিপাতেও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি সমর্থিত জনপ্রিয়তার শীর্ষে একক প্রার্থী হিসেবে হাসান মামুনকে নির্বাচিত করার জন্য তারা ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।পর্যায়ক্রমে এই আসনে বিএনপি’র ভোট বাড়লে ও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার জন্য পর্যাপ্ত ছিলোনা।আলহাজ্ব শাহজাহান খানের মৃত্যুর পরে এবং গলাচিপা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি, জাতীয়তাবাদী কৃষক দল কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-অর্থ বিষয়ক সম্পাদ আলহাজ্ব গোলাম মোস্তফার নীরব ভূমিকায় দশমিনা,গলাচিপার একক নেতৃত্ব ও দায়িত্ববোধ চলে আসে হাসান মামুনের হাতে। তিনি তার মেধা সততা ন্যায়-নীতি ও সাংগঠনিক দক্ষতার মাধ্যমে দশমিনা গলাচিপায় আওয়ামী লীগের দুর্গকে ভেঙে দিয়ে বিএনপি’র গণজোয়ার তৈরি করেছেন।এই এলাকার বাসিন্দাদের একটাই দাবি তারা আগামী এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হাসান মামুনকে ধানের শীষের কান্ডারী হিসেবে চান এবং সর্বস্তরের জনসাধারণ নিজ নিজ দায়িত্বে হাসান মামুনকে বিপুল ভোটে বিজয় করে এই অবহেলিত দশমিনা,গলাচিপা বাসির ভাগ্য উন্নয়নের জন্য কাজ করার সুযোগ দিতে চান।যেমনটা তিনি আগেও করেছিলেন ছাত্র রাজনীতিতে থাকা অবস্থায়,অসংখ্য বেকার যুবককে বিনা টাকা পয়সায় চাকরি দেওয়ার মধ্য দিয়ে।অত্র এলাকার এমন অনেক কৃষক, শ্রমিক, ব্যবসায়ী চাকরিজীবী যারা বিগত দিনে অন্যান্য দল সমর্থিত ও নিরীহ বাসিন্দা ছিলেন তাদের অনেকের সাথে কথা বলে জানতে পেরেছি, তারাও এবার ব্যক্তি হাসান মামুনের আদর্শে আদর্শিত হয়ে তাকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করতে চান।এই আসনের জনগণ হাসান মামুনকে ছারা বিএনপি সমর্থিত জোটের কোন নেতাকে মেনে নিবেন না বলে জানিয়েছেন।প্রয়োজনে তারা অনেকেই রাজনীতি ছেড়ে দিবেন।তাদের একটাই কথা হাসান মামুন যেভাবে দশমিনা,গলাচিপা বাসিকে কে ঐক্যবদ্ধ করেছেন,স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে এমন ঐক্যবদ্ধ আর কেউ করতে পারেননি, তাই তারা এবছর শতভাগ আশাবাদী হাসান মামুনকে জয় যুক্ত করে এই আসনটি বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে উপহার দিবেন।যার প্রতীক্ষায় দীর্ঘদিন অপেক্ষা করেছিলেন এই আসনের জনগণ।